শ্যামল মণ্ডলের কবিতা পড়ুন

যাত্রা পথে কিছু কথা কিছু স্মৃতি

 যাত্রা পথে কিছু কথা কিছু স্মৃতি 

---------------------------------------

ছিলাম টাটা কেমিক্যাল (লবন ও সোডা ফ্যাক্টরি) এর টাউনশিপে। বিকাল সাড়ে পাঁচটায় একটি অটো ডেকে নিলাম দ্বারকা থেকে বাস ধরার জন্য। ৩০০ টাকা দিয়ে দ্বারকা। রাত আটটার বাস ধরতে হবে তাই। যথাসময়ে বাস ছেড়ে দিয়েছে এবং দ্বারকা ধাম ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছি খুব দ্রুত গতিতে...... 

এইমাত্র, রাত ১০: ৩৩, পার করলাম রিলাযান্স এর জামনগর রিফাইনারী। ২০১৫ থেকে ২০১৮ ছিলাম সিমপ্লেক্স কোম্পানিতে, তাই স্মৃতি বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়ার পরেও ফিরে এসেছে ক্ষণিকের জন্য । এরপর আসবে জামনগর শহর, যে শহরে থেকে প্রত্যেক দিনের সূর্যোদয় হোত রিফাইনারীর গেটে পৌছে। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল  রবিবার। তার মানে, আমার জন্য জামনগরে মাসে ২৬ দিন'ই সূর্য উঠতো না। সূর্যাস্ত কখন হোত বা কোথায় হোত তা জানার সময় হতোনা। আমার কাজের বৃত্তান্ত বা ফিরিস্তি শুনিয়ে লাড নেই। তবে, ক্লাযেন্ট রিলাযান্স হোক বা চাকুরী দাতা সিমপ্লেক্স, এর মোটামুটি সবাইকে খুশি করেছিলাম কাজের মাধ্যমে। J3 head RIL  স্যারের পাঠানো অভিনন্দন বার্তা পাঠানো ইমেলটিও স্বযত্নে রাখা আছে। কারণ, একই কাজ অন্যত্র যা একবছর লেগেছে, আমার সাইটে তা চার মাসে। তাঁর কৃতিত্ব আমার বশ এবং সহকর্মীগণ।
আজকের যাত্রাপথে করোনার ভয়ের সাথে রয়েছে মাস্ক, স্যানিটাইজার স্প্রে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার। এক দিকের সিঙ্গেল সাইড স্লিপারে বেশ আরামেই চলেছি। লিখতে লিখতেই পৌঁছে গেলাম জামনগর শহর, রাত এখন ১১:০৩। আজ তাকেই বিদায় জানিয়ে এগিয়ে যাবো। জামনগরে আর আসা হবে না তা নিশ্চিত। এখানে একটি বাজার আছে, গুরুদোয়ারা মার্কেট। সুযোগ পেলেই সকাল সকাল বাজারে গেলেই বাঙালির প্রিয় সব রকমের মাছ'ই পাওয়া যায় কলকাতার যে কোন বাজারের মতো, তবে যেহেতু অধিকাংশ গুজরাতী নিরামিষাশী বা আমিষ থেকে শতযোজন দুরে থাকেন তাই আমিষ বাজার গলি ঘুপচিতেই বসে। বাস ছাড়লো জামনগর থেকে রাত ১১:৩০ । হ্যা, ভালো মন্দ মিশিয়ে সব ধরনের লোক সব জায়গায় আছে। এই জামনগরেও আমার এমন বন্ধু রয়েছেন যাদের তুলনা করা সম্ভব না। নোটবন্দির সময় আমার কাছে নগদ তিন হাজার ছিল সবই অচল। বাড়ি যেতে হবে, এটি এমে টাকা নেই। রিজার্ভেশন ছিল, তবে তা আমেদাবাদ থেকে হাওড়া। এবারে জামনগর থেকে আমেদাবাদ কিভাবে যাবো এবং পথ খরচ কোথায় পাবো, তাই ভাবছিলাম, এবং ভাবতে ভাবতে মুদিখানা দোকানে গেলাম দুপ্যাকেট বিস্কুট নিতে হবে, কারণ সেদিনই ট্রেন। বন্ধুবৎসল দোকানদার Mr. Vinoy Bhai Gosai নিজেই জানতে চাইলেন
--মণ্ডল স্যার আভী তো নয়া জমানে কি নয়ে রুপাইযা চাহিয়ে, হ্যায় কী নেহী? নেহী তো হাম দো হাজার দেরহে।
আমি বললাম - বিনয় ভাই ইসি টাইম মে মুঝে পয়সা দোগে আউর ঘর সে বাপস নেহী আযেঙ্গে তো?
উনি বললেন - আপ নেহী আওগে তো পয়সা মকুব হো যায়গা।
যাইহোক জামনগর থেকে বাড়ি পৌঁছানো অবধি পুরনো একটি টাকাও কেউ ছুঁয়ে দেখেনি। তখন বোধহয় শুধুমাত্র টাকাতেই করোনা ছিল। আর একজন রয়েছেন Mr. Ashok Kumar যিনি চম্বলের ফুলনদেবীর ভাইপো। বাড়ি ভরুচে কর্মসূত্রে জামনগর থাকেন। গতবছর আমার হয়েছিল ডেঙ্গি। আমি একাই হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম কিন্তু ফলমূল থেকে কম্বল অবধি কিনে দিয়েছিলেন। তিনি আমার পুরনো বন্ধু। আর একজন গুজরাত বন্ধুর নাম মনে আসছে না এই মুহূর্তে। রক্তের প্রয়োজনে হলে বা অন্য যে কোন প্রয়োজন মেটাবেন। এগুলো সবই কিন্তু আমার নিরবিচ্ছিন্ন সততার প্রাপ্তি 🙏
রাত ১:৩৩ এ রাজকোট এবং রাজকোট থেকে দশ মিনিট পরেই বাস ছেড়ে দিল। বাস ছুটে নিজের পথ ধরে রাত জাগা ড্রাইভার দুজন সহকারী নিয়ে। আমার স্লিপার সিটে টান-টান হয়ে শুয়ে পড়লাম চোখ বন্ধ করে, ঘুম হবে না বা আসছেও না। পাক্কা আড়াই বছরের কর্মস্থল দ্বারকা ছেড়ে চলে যাচ্ছি। অনেক স্মৃতি রয়ে গেল কখনো অম্ল কখনো মধুর। বিস্তারিত লেখা হবে, তবে এখন নয়। ঘুম আসছে না বলেই এসব মনে পড়ছে। মাঝে মাঝে উঠছি আর স্যানিটাইজার স্প্রে করছি। কান ব্যথা হয়ে গেলেও মাস্ক খোলার জো নেই। হঠাৎ মোবাইলে অ্যালার্ম বেজে উঠলো সকাল ৬:৩৪ আমেদাবাদ পৌছাতে ১৫ কিমি বাকি। তারপর পৌঁছে গেলাম গন্তব্যের বাসস্ট্যান্ড গীতা মন্দির। নেমেই অটো পেয়ে গেলাম সেখান থেকে মিটার ঘুরিয়ে ২৭০ টাকায় কর্মস্থলে।


Previous
Next Post »