শ্যামল মণ্ডলের কবিতা পড়ুন

মহিলা মহল - শ্যামল মণ্ডল

 অনুগল্প: মহিলা মহল

**"********

শ্যামল মণ্ডল 


       (ছবি: প্রতিকী) 

-----রীতা দি জানো তো তপনের বৌটার না চালচলন মোটেও ভালো না , 

আর বলিস না মিঠুর মা, সারাদিন দেখিস না চুরিদার ছাড়া মহারাণী অন্য কিছু চলে না। 

পাশ থেকে রতনের বৌ ---- ও মৌ দিদি , সেদিন দেখলাম বাবলার সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছে আর হাসাহাসি করছে । 

তপনের মা সেই আড্ডার একজন প্রতিদিনের সদস্য। তিনি বসে বসে সব শুনছেন, না শুনে আর উপায় তো নেই। আড্ডা থেকে উঠে গেলেও দোষ। সবাই যে যার কাজ সংক্ষেপে সেরে নিয়ে এই আড্ডায় আসা চাই। এভাবেই মহিলা মহলের দিন কেটে যায়। তপনের মা এসব শুনতে শুনতে আজ একেবারে ওদের আপনজন, সংসারের হিতাকাঙ্ক্ষী ভেবে নিয়েছেন। তপনের বাবা বৃদ্ধ মানুষ, বেশি চলাফেরা করার মত অবস্থায় নেই। সাধাসিধে হলেও অল্পেতেই রেগে যান। তিনিও একজন ঐ মহলের কানাডা(কানেশোনা সদস্য) । উপায় না থাকলে যা হয়। ঘরের উল্টোদিকে আসর, আর উনি বসে থাকেন ঘরের সামনে। তিনি শুনতে পান অনেক কিছু-- যেমন, 

কেমন বৌ রে বাবা, ভাসুর দেখলে ঘোমটা দেয় না, কথায় কথায় তর্ক করে। বড় ছোট জ্ঞান নেই। দুদিন পর পর বাপের বাড়ি যায়, আমাদের বৌমা তো অমন না, আমাদের বৌমারা ঘর থেকেই বের হয় না (উনার বৌমাটিও আসরের সদস্য, একদম গ্রামের মেয়ে) । তপনের মা তাঁর আদুরে ছেলেকে কাছে পেলেই বৌমাকে নিয়ে কিছু শুনিয়ে দেয়, তপনের বাবা আবার অন্যরকম, যা শোনানোর সরাসরি বৌমাকেই। বৌমা তো এমনিতেই মিথ্যা কথার বানানো কথার ধার ধারে না, জমে ওঠে শ্বশুর বৌমার ঝগড়া। ওদিকে আসরের খোরাক আরো বেড়ে যায়, সদ্য রিটায়ার্ড করা শিক্ষিকা যার কথা নাকি আসরের সবাই মেনে চলে। শিক্ষিকা মানে তরুণের মা , উনি অবশ্য আসরে যোগ দেন দুই জা মিলে। উনার জা যদি আসতে একটু দেরি করেন ততক্ষণ চলে উনার জা কে নিয়ে সমালোচনা। আবার জা'টি এলেই একদম গলায় গলায় মিল। 


----

তপনের বৌ কেয়া মফস্বলের মেয়ে, ব্যবহারে মানবতাবাদী, ভালো কথায় ভালো খারাপ কথায় তীব্র প্রতিবাদী। কাউকে যেমন ছেড়ে কথা বলে না, তেমন কেউ কোন সাহায্য চাইলে না করতে পারে না। সে জন্য সবাই ওকে যেমন ভালোবাসে, সমীহ করে, আবার ভয় পায় না জানি কখন রেগে যায়। পাড়া হোক বা বে-পাড়া আত্মীয় বা অনাত্মীয় কারো কোন অসুখ-বিসুখ হলে ডাক পড়ে কেয়া'র। এভাবে কলকাতার হাসপাতাল গুলোতে নিয়মিত জামায়াত। ডাক্তার নার্স সবার কথা বলা কেয়ার কাজ। সেজন্য কেয়ার কাছে ফোন আসে এবং কেয়া যথারীতি বাপের বাড়ি পৌঁছে যায়, কারণ বাপের বাড়ি তো কলকাতার কাছেই। চলাফেরার সুবিধার জন্য ওঁকে চুরিদার বেছে নিতে হয়েছে। 


এসব কারণে ঘরের কোণের গৃহবধূ কোনদিন হতে পারেনি। কেয়ার এই চরিত্রের জন্য কেয়াকে খুব ভালোবাসে। তপনের অনুমতি ছাড়া কেয়া কোথাও যায় না। তপন তো এটাই চেয়েছিল, তপন একসময় সোস্যাল ওয়ার্কার ছিল। চাকরির জন্য আজকাল তপনের আর সময় হয় না। তপনের স্ত্রী সেই শূন্য স্থান পূরণ করেছে বলে তপন নিজেকে ধন্য মনে করে। 


কিন্তু ঐ যে মহিলা মহল! উনাদের এসব অসহ্য লাগে।


ফটিকের বৌ সন্ধ্যা কিছুদিন ধরে আসরে নিয়মিত আসা শুরু করেছে। সন্ধ্যার জায়ের সাথে একটুও বনিবনা নেই। সন্ধ্যার জা কার মোটরবাইকে চড়ে কোথাও দরকারী কাজে গিয়েছিল তাই নিয়ে নানা আলোচনা এবং আলোচনায় শেষ পর্যন্ত পরকিয়া বা চরিত্রহীন তকমা পেয়ে যায় । এভাবে প্রায় জনাকুড়ি  সদস্য নারী বাহিনীর আড্ডা। আসর বেশ জমাট।


Previous
Next Post »