শ্যামল মণ্ডলের কবিতা পড়ুন

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের প্রতি : - শ্যামল মণ্ডল

 উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের প্রতি : 



আমার বিদ্যালয় দোহিল হাই স্কুল। ১৯৮৯ সাল। মাধ্যমিক রেজাল্ট নিয়ে সেই যে এলাম। আহিল ও মালদাকে বিদায় জানিয়ে নবদ্বীপে এলাম। দোহিল হাই স্কুলের সাথে আর দেখা হল না।মাটির দেয়াল আটচালা স্কুল বাড়ি তিনদিকে ঘেরা। পাশেই সুন্দর সাজানো পাকা একতলা প্রাইমারি স্কুল। সামনে চারটি খেজুর গাছ, একটি আমগাছ, প্রশস্ত খেলার মাঠ, মাঠ ভর্তি চোরকাঁটা ঘাস, পিছনে একটি পুকুর। মাঠ থেকে কুড়িয়ে আনা গোবর সঙ্গে পুকুর থেকে বালতি বালতি জল, যা দিয়ে চলতো প্রত্যেক ঘরে যাদের যে ক্লাস তাঁরা সেই ক্লাস ঘর গোবরময় করে দেওয়া যা ছিল প্রত্যেক শনিবারের রুটীন। ছেলেরা আনবে গোবর, জল আর মেয়েরা ঝাড়পোছ করবে। কতদিন যে  জল আনতে গিয়ে পা পিছলে এক কোমর জলে ভিজে গেছে কত ছাত্র-ছাত্রী । পুকুর পাড়ে বিপ্লবদের একটি মহুয়া গাছ, সে গাছের ফুল কুড়িয়ে মুখে দিয়ে তার মধুর স্বাদ নেওয়া । নির্মলদের বেল গাছের তলায় একবার করে ঢু মারা বড় বড় পাকা হলদে বেল  , চড়কমেলা প্রাঙ্গণে ঝুড়ি নামা পাঁচটি বটগাছ, সঙ্গে অশত্থ গাছ। আর ঐ যে পুকুর যে পুকুরের পাশ দিয়ে যেতে গা ছমছম করতো আলপথে হাটনগরের দিকে যেতে বাম দিকে সেই পুরনো পুকুর। সাপের মতো আলপথের দুপাশে ধান ক্ষেতের বুক চিরে হাটা পথেই চলতো সাইকেলের নিয়মিত যাতায়াত । কখনো কখনো পা পিছলে ধপাসের মুহূর্তে পিছন ফিরে দেখা।

আহিল - নরসিং ডাঙ্গা- মধু ডাঙ্গা - হাটনগর - দোহিল কখনো আলপথ কখনো কাদামাখা মেঠো পথে নিয়মিত হনহনিয়ে হেঁটে যাতায়াত। এসব স্মৃতি নিয়েই আমার ছড়া ও কবিতার ছন্দে ছন্দে গ্রাম্য চিত্রে ফুটে উঠেছে । ভূগোলের বালা স্যারের হাতে কলমী কচা যা পীঠে আদর করেনি এমন ছাত্র-ছাত্রী কাউকে পাওয়া যায়নি তা সত্ত্বেও সব বিষয়ের মধ্যে ভূগোলেই ভালো নম্বর জুটতো। জীতেন স্যারের ইংরেজি উচ্চারণে এখনও আমি সমৃদ্ধ। রঞ্জিত স্যারের ইংরেজীতে (হাতে পাতলা কঞ্চি দেখে ইংরেজির A ভুলে যাওয়া) আমার বিপর্যয় হওয়া। ইতিহাসের চিত্ত স্যারের প্রেরণাতেই পাতার পর পাতা লিখে ভরিয়ে দিতাম। আর খগেন স্যারের বিজ্ঞান সমস্যা আর সমাধান, চুম্বকের টানেই ছিলাম ভৌত বিজ্ঞানে ¡ আমার প্রিয় বন্ধু সহপাঠিদের সবাইকে এখনও ফেসবুকে খুঁজে বেড়াই। কিন্তু কাউকেই পাচ্ছি না তার একটা বড় কারণ সে সময়ে আমরা হয়তো কেউ কারো বন্ধু ছিলাম না।  নিজের ক্লাস ছাড়া অন্য ক্লাসের সম্পর্ক ছিল দাদা ভাই বা দিদি বোন, যেন একটা বিশাল পরিবার। উচু ক্লাসের সবাইকে যেমন সমীহ করতাম নিচু ক্লাসের সবাইকে তেমন ছোট ভাইবোনের মতো দেখতাম। বিদ্যালয় থেকে বিদায়ের পর সবাই সবাইকে ভুলে গেছি। অত:পর একটা সময় এলো স্মৃতির পাতা খুলে দেখার তাই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো ফিরে পেতে এখানে ওখানে খুঁজে ফেরা। কিন্তু হায় ¡ সবাই যে যার জীবনকে আঁকড়ে ধরে বেচে আছে। এত কথা লিখলাম এই কারণে, পড়াশোনার শেষে পরবর্তী সময়ে যেন তোমাদের বন্ধুত্ব অটুট থাকে সেদিকে খেয়াল রেখো। তবেই ছাত্রাবস্থার আনন্দ সারাজীবন সঙ্গে থাকবে।

Previous
Next Post »